একজন উদ্যোক্তা যখন পাবলিক প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি তৈরি করার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তখন তাকে প্রথমেই কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধনের প্রথম ধাপ হলো নামের ছাড়পত্র। নতুন প্রতিষ্ঠানের নামের ছাড়পত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) নিয়ে নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র ও ফি সহ নির্ধারিত আবেদন ফর্মের মাধ্যমে আবেদন করবেন। যদি পাবলিক বা প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিভিত্তিতে ব্যবসা করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন, তখন রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে গিয়ে প্রথমে আপনার প্রতিষ্ঠানের নামের ছাড়পত্র নিতে হবে ।
শুরু করার আগে চলুন জেনে নেই কোম্পানি নিবন্ধনের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ঃ
১. পরিচালকবৃন্দ –
প্রতিটি কোম্পানির পরিচালকের সংখ্যা কমপক্ষে দুজন (আবাসিক কিংবা অনাবাসিক) হতে হবে এবং পরিচালকবৃন্দের পদবী এবং শেয়ারের সংখ্যা স্পষ্টভাবে কোম্পানির সংঘবিধিসমুহে (Articles of Association) উল্লেখ থাকতে হবে। এর সাথে লক্ষ্য রাখতে হবে ১৮ বছরের কম কিংবা দেউলিয়া কিংবা কোনোরূপ আর্থিক অপরাধমূলক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকা প্রমাণিত হলে পরিচালকগণ অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
২. অংশীদারগণ –
একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির অংশীদারের সংখ্যা হতে পারে সর্বনিম্ন ২ জন হতে সর্বোচ্চ ৫০ জন। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির জন্য এ সংখ্যা হবে সর্বনিম্ন ৭ জন এবং এর বেশী। কোন কোম্পানির অংশীদার কোন ব্যাক্তি ও হতে পারেন কিংবা অন্য কোন একটি কোম্পানিও হতে পারে এবং কোম্পানির পরিচালকগণও কোম্পানির অংশীদার হতে পারেন।
৩. অনুমোদিত মূলধন
(Authorized Capital) – কোন নিবন্ধিত কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন হল ঐ কোম্পানিটির সর্বোচ্চ পরিমাণ মূলধনের সীমা যা প্রতিটি অংশীদারদের মধ্যে বণ্টন করা হয়। এই পরিমাণের সংখ্যা স্পষ্টভাবে সংঘ স্মারক (Memorandum of Association) এবং সংঘবিধিসমুহে (Articles of Association) অবশ্যই উল্লেখ থাকতে হবে এবং এসকল দলিলপত্র নিবন্ধনের পূর্বেই যথাযথভাবে প্রস্তুত করে নিতে হবে।
৪. নিবন্ধনের ঠিকানা –
কোম্পানি নিবন্ধনের জন্য অবশ্যই একটি প্রাসঙ্গিক ঠিকানা (আবাসিক কিংবা বাণিজ্যিক) প্রদান করতে হবে যা কোম্পানির নিবন্ধিত ঠিকানা বলে বিবেচিত হবে।
৫. পরিশোধিত মূলধন (Paid-Up Capital) –
নিবন্ধনের সময় কোন কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন বা মূলধন সর্বনিম্ন ১ টাকা হতে হবে। নিবন্ধনের পর অনুমোদিত সীমার মধ্যে যে কোন পরিমাণ অর্থ কোম্পানির মূলধন হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
চলুন জেনে নেই কি কি ধাপ অনুসরণ করলে বাংলাদেশে কোম্পানি নিবন্ধন করা যায়ঃ
★কোম্পানির নামের ছাড়পত্রঃ
ধাপ-১ রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানীজ এন্ড ফার্মস এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে নামের
ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করতে হবে।
ধাপ-২ নির্দিষ্ট ব্যাংকে নামের ছাড়পত্রের ফি জমা দিতে হবে ।
ধাপ-৩ নামের ছাড়পত্রের আবেদন এবং ফি প্রাপ্তি সাপেক্ষে রেজিষ্টার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানীজ এন্ড ফার্মস
নতুন প্রতিষ্ঠানের নামের ছাড়পত্র প্রদান করবে (যদি এই নামে পূর্বে কোন ছাড়পত্র প্রদান না করা হয়ে থাকে)
ধাপ-৪ নামের ছাড়পত্র ইস্যুর তারিখ হতে ১৮০ দিন পর্যন্ত কার্যকর থাকে । এই সময়ের মধ্যে রেজিক্ট্রেশনের
জন্য আবেদন করতে হবে।
★কোম্পানি নিবন্ধনের শর্তঃ
ধাপ-১ নামের ছাড়পত্র পাবার পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, নির্ধারিত ফরম ও সিডিউল এবং প্রযোজ্য ফিসসহ রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করবেন । এক্ষেত্রে-
(ক) মেমরান্ডাম ও আর্টিকেল অফ এ্যাসোসিয়েশন তৈরি করতে হবে
(খ) ওয়েবসাইটের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করতে হবে;
(গ) নির্দিষ্ট ব্যাংক রেজিষ্ট্রেশন ফি জমা দিতে হবে ।
ধাপ-২ রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানীজ এন্ড ফার্মস নিম্নের বিষয়াদির উপর সন্তুষ্টি সাপেক্ষে সার্টিফিকেট
অব ইনকরপোরেশন ইস্যু করে থাকে
(ক) প্রস্তাবিত নামের ছাড়পত্র প্রাপ্তিঃ
(খ) নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন;
(গ) মেমোরেন্ডাম ও আর্টিক্যালস অব এসোসিয়েশন, নির্ধারিত ফরম, সিডিউল ইত্যাদি তৈরী এবং জমা:
(ঘ) আবেদন ফি জমা ।
ধাপ-৩ প্রাইভেট ও পাবলিক কোম্পানী রেজিস্ট্রেশন করার প্রক্রিয়াঃ
(ক) রেজিষ্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানীজ এন্ড ফার্মস এর হোম পেজের রেজিস্ট্রেশন হেডিং এর
আওতায় (Apply for registration) এ ক্লিক করতে হবে;
(খ) প্রতিষ্ঠানের ধরণ (প্রাইভেট কোম্পানী/পাবলিক কোম্পানী) সিলেক্ট করতে হবে;
(গ) নামের ছাড়পত্রের জমার নম্বর এবং পত্রের নম্বর পূরণ করতে হবে । এরপর continue বোতামে
চাপ দিলে রেজিষ্ট্রেশন আবেদনের পাতাটি আসবে;
(ঘ) নির্ধারিত ফরমসমূহ যথাযথভাবে পূরণ করতে হবে
(ড) মেমোরেন্ডাম অব এসোসিয়েশন (০/১) অন্তর্ভুক্ত করতে হবে;
(চ) আর্টিকেলস অব এসোসিয়েশন অন্তর্ভুক্ত করতে হবে;
(ছ) MOA & AOA অন্তর্ভূক্ত তথ্যসমূহ ভালভাবে দেখে চূড়ান্ত করতে হবে ।
(জ) সবশেষে submit বোতামে ক্রিক করতে হবে এবং continue বোতামে ক্রিক করে নির্ধারিত ফি
প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত হতে হবে।
★নিবন্ধন পরবর্তি প্রক্রিয়াঃ
এই ধাপটি নিবন্ধন প্রক্রিয়ার কোনো অবিচ্ছেদ্য অংশ নয় তবে এর মধ্যে সেসব অন্তর্ভূক্ত আছে কোম্পানী নিবন্ধন শেষ হবার পর সেসব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা প্রয়োজন হতে পারে।
লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে (প্রাইভেট এবং পাবলিক) যা যা নিতে হবে,
১.আবেদনের সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিলের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন হতে ট্রেড লাইসেন্স।
২.জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর ওয়েবসাইটে আবেদনের মাধ্যমে প্রাপ্ত কর শণাক্তকরণ নম্বর (TIN)
ওনলাইন আবেদন প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত মূসক নিবন্ধন সার্টিফিকেট।
৩. বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্স অথরিটি হতে প্রাপ্ত ফায়ার সার্টিফিকেট।
৪. পরিবেশ অধিদপ্তর হতে প্রাপ্ত পরিবেশ ছাড়পত্রের সার্টিফিকেট (যদি কোনো শিল্প প্রকল্প জড়িত থাকে)।
লিগ্যাল সলিউশন চেম্বার(এলএসসি)
যোগাযোগ - ০১৭৩২৬০৪৬০৩

Comments
Post a Comment